আরবি ক্যালিগ্রাফি এমন একটি শিল্পকলা, যেটাতে ভেতর-বাইরে এমন অনেক বিষয় আছে যা আসলেই রহস্যময়। এর মধ্যে একটা হলো-কলম কাটা বা প্রস্তুত করা। দশম শতকের শেষ দিকে ইরাকের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার, যিনি প্রথম জীবনে পেশাদার পেইন্টার ছিলেন এবং এত সুনাম অর্জন করেন যে তাকে দিয়ে একটা পোট্রেট বা ল্যান্ডস্কেপ ছবি আঁকানোর জন্য লাইন লেগে যেত। উনার নাম- আলি বিন হিলাল বিন আব্দুল্লাহ। সংক্ষিপ্ত নাম- ইবনে বাওয়াব (মৃ ১০২২)। তিনি এক ঘটনার প্রেক্ষিতে পেইন্টিং ছেড়ে ক্যালিগ্রাফিতে আত্মনিয়োগ করেন এবং সারা দুনিয়ায় তোলপাড় করেন তার ক্যালিগ্রাফি দিয়ে। তার লেখা ৬৪টি কুরআনের কপির কথা জানা যায় যেগুলো সব ছিল ক্যালিগ্রাফি কুরআন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা একটা রহস্য হয়ে আছে, একজন মানুষ কিভাবে এতগুলো ক্যালিগ্রাফি কুরআন এবং একটা দিওয়ান(বৃহৎ কাব্য) লিখেছেন। তো তিনি প্রায় বলতেন, ক্যালিগ্রাফির কলম কাটার বিষয়ে তোমরা আমার কাছে জোর করো না। এর রহস্য আমি প্রকাশ করতে চাই না। এজন্য তিনি কখনো কারো সামনে কলম কাটতেন না।
এবার কলম কাটার বিষয়ে কিছু কথা বলি:
নলখাগড়া, কঞ্চি, বাঁশ, খেজুর গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি আঁশযুক্ত কাঠ দিয়ে ভালো কলম তৈরি করা যায়। তবে কলম তৈরির ক্ষেত্রে পদ্ধতি আলাদা।
কলম কামিশ (মিষ্টি পানির নলখাগড়া) যে পদ্ধতিতে করা হয়, কলম বুস (কঞ্চি বা চিকন বাঁশ) হবে বিপরীত পদ্ধতি ব্যবহার করে। আবার কলম বুরা (শক্ত ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ) তৈরিতে উভয় পদ্ধতির মিশ্রনে তৈরি হয়। আর কলম তুমার একেবারে ভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি হয়।
কলম তৈরির চারটি ধাপ আছে। এক. ফাত্হ, দুই. নাহ্ত, তিন. কাত্ত ও চার. সাক্ক।
কলম কাটার ক্ষেত্রে কাত্ত পর্বে কৌণিক মাপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মানুষের হাতের গ্রিপ অনুযায়ী এবং ক্যালিগ্রাফি শৈলী বিবেচনায় কলমের মাথার কৌণিক মাপটি একটু এদিক ওদিক হয়। যেমন – আমার হাতের গ্রিপ অনুযায়ী সুলুস শৈলীর কলমের কৌণিক মাপ ২৩°-২৪° ডিগ্রি। তবে এর আদর্শ মাপ ২২°-+ এবং এর সাথে হাতের গ্রিপ মিলে ১°-২° কমবেশি হয়। মজার বিষয় হলো, ছাত্রের লেখা দেখে উস্তাদজি এই মাপ আন্দাজ করে ফেলেন।
আরো যেসব বিষয় এর সাথে জড়িত তা একজন অভিজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার ব্যতীত জানা মুশকিল।
কলম বিষয়ে শৈশবে একটা ফারসি বয়েত শিখেছিলাম – “কলম গোইয়াদ কেমান শাহে জাহাঁ নম ।। কলম কাশ রা বদৌলতে মি রছা নম”