Article

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

islamic ‍arabic calligraphy bismillah

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (আরবি: بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ, বি-স্‌মি ল্‌লাহি র্‌-রাহ্‌মানি র্‌-রাহিম); সংক্ষেপে বিসমিল্লাহ নামেও পরিচিত বা তাসমিয়াহ (আরবি: تَسْمِيَّة) হলো একটি ইসলামি বাক্যাংশ যার অর্থ “পরম করুণাময়, অসীম দয়াবান আল্লাহর নামে”।এটি এমনই একটি বাক্য যা দিয়ে পৃথিবীর সকল দেশের সমস্ত ক্যালিগ্রাফারগণ সবচেয়ে বেশী ক্যালিগ্রাফি করেছেন। ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যাংশগুলোর একটি। এছাড়া হাদিস থেকে জানা যায় ইসলামের নবি মুহাম্মাদ প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে এই বাক্যাংশটি বলতেন।[১] তাঁর অনুকরণে মুসলিমরা বেশিরভাগ সময় “উত্তম কাজ” শুরু করার পূর্বে এবং দৈনন্দিন কাজ শুরু করার পূর্বে এটি ব্যবহার করে থাকে। বিধানগত বিচারে এটা মাসনুন বা মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর বলে বিবেচিত।
এটি কুরআনের প্রতিটি সূরার শুরুতে তিলাওয়াতকৃত বাক্যাংশ – কেবল নবম সূরা বাদে। কুরআনের পাঠ্যের মধ্যে বিসমিল্লাহকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কিনা তা নিয়ে মুসলিমদের মতভেদ ১৯২৪ সালের কায়রো সংস্করণের পরে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, যেখানে এটিকে কুরআনের ১ম সূরার প্রথম আয়াত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্র এটিকে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ১১২ টি সূরার আগে পাঠ্যের একটি অসংখ্যায়িত বাক্যাংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই ধ্রুপদী আরবি শব্দগুচ্ছটির ঐতিহ্যগত নাম ছিল তাসমিয়াহ। এটিকে বাসমালা (بَسْمَلَة) নামেও ডাকা হয়। বাসমালা শব্দটি একটি সামান্য অস্বাভাবিক পদ্ধতি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যেখানে বিসমিল্লাহি… বাক্যাংশের প্রথম চারটি উচ্চারিত ব্যঞ্জনবর্ণ একটি নতুন চতুর্ধ্বনিত ক্রিয়ামূল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল: ব্‌–স্‌–ম্‌–ল্‌ (ب-س-م-ل)। এই চতুর্ধ্বনিত ক্রিয়ামূলটি বিশেষ্য বাসমালা এবং এর সাথে সম্পর্কিত ক্রিয়ারূপগুলো পেতে করতে ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ “বাসমালা পাঠ করা” একটি বাক্যাংশে একাধিক শব্দের ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে একটি চতুর্ধ্বনিত নাম তৈরি করার পদ্ধতিটিও আলহামদুলিল্লাহর ঐতিহ্যবাহী নাম তাহমিদের পরিবর্তে “হামদালা” নামটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

আয়িশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, “যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”। (আবু দাউদ হা-৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ হা-৩২৬৪)।
ইসলামে বিসমিল্লাহর গুরুত্ব ও বরকত অপরিসীম। কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে সে কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতারিত হতে থাকে। শয়তান সেখানে অবস্থান নিতে পারে না। মুহাম্মদের (সা.) কাছে প্রথম ওহী অবতরণের সময়ও এই বাক্য পড়ানো হয়েছিল।
শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার দোয়া।মুসলিমরা বিসমিল্লাহ দিয়েই সব কাজ শুরু করতে হয়। তারা মনে করে, কাজ ও কথার শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে,
যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য থাকে। এর মাধ্যমে কাজের শুরুতে আল্লাহর আনুগত্য করা হয় এবং মানুষের অমতা ও বিনয় ভাব প্রকাশ পায়। এ বাক্যের মাধ্যমে কর্ম শুরু করলে শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে করুণা করেন, হেফাজতে রাখেন ও কাজে বরকত দান করেন। আনাস রা. বলেন, { রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহের নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আমার কোনো উপায় নেই, কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া’ তখন তাকে বলা হয় তুমি পথ পেলে, উপায় পেলে ও সহায়তা পেলে। তারপর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়। নবী করীম (সা) বলেছেন, “শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।” (মুসলিম হা-২০১৭, আবু দাউদ হা-৩৭৬৬)
জাবির রা. বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ করো। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়ি ভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখো। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখো।” (বুখারি হা-৩২৮০, মুসলিম হা-২০১২, আবু দাউদ হা-৩৭৩১, তিরমিজি হা-২৮৫৭)[২১]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *