ইসলামে জীব—জন্তুর ছবি এবং প্রাণির ভাস্কর্য নির্মানের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুসলমানরা হস্তলিপির প্রতি
অধিকতর মনোনিবেশ করে। মুসলমানদের জীবন বিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ভাষা আরবি হওয়ায়,
তাকে লিপিবদ্ধ করার তাকিদে মুসলমানরা প্রাক ইসলামিক যুগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পৃথীবির বিভিন্ন
প্রান্তে মুসলিম ক্যালিগ্রাফারগণ নিরলশ ভাবে কুরানিক শিল্পের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় নবী
হযরত মুহাম্মদ স. এঁর উৎসাহ প্রদান এই শিল্পের বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক। সমগ্র বিশ্বে কয়েক হাজার বর্ণমালা
থাকলেও আরবি বর্ণমালার মতো এতো শৈল্পিক উপস্থাপন পৃথীবির কোন প্রান্তে পরিলক্ষিত হয় না। আরবি বর্ণমালা
এক বিশেষ গুণে গুণান্নিত যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে শৈল্পিক উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজেকে আরো শক্তিশালি
শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আরবী বর্ণমালাগুলো সমান্তরাল এবং লম্ব প্রকৃতির । তাই তাকে প্রয়োজন বোধে
ছোট—বড় করে অলংকরণের উপযোগী হিসাবে গড়ে তোলা যায়। যা অন্য বর্ণমালাতে খুব একটা দেখা যায় না।
এছাড়াও উদ্ভিদীয় ও জ্যামিতিক পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতি রেখে আরবি বর্ণমালা দিয়ে যে কোন ভাবে নকশা
করা যায়। একারণেই শিল্পীগণ অলংকরণের পরিমন্ডলে সৌন্দর্যের এক মনোরম আবহ সৃষ্টি করেন। যার প্রভাব
এতোটাই মনোমুগ্ধকর অমুসলিমদেরও আকৃষ্ট করে ছিলো। আরবি ক্যালিগ্রাফির শিল্প—সুষমায় মুগ্ধ হয়ে ধর্মীয়ও
বিশ্বাসসংক্রন্ত আরবি বানী অমুসলিম শাসক ও শিল্পানুরাগীরা তাদের মুদ্রা ও স্থাপত্যে উপস্থাপন করেছে।
উদহারণ হিসাবে বলা যায়, ৮ম শতাব্দীর মরিসাস খ্রিষ্টান শাসক আপফা (৭৫৭—৭৯৬খ্রি.) তার মুদ্রায় কুফি লিখন
পদ্ধিতিতে অলংকরণ বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে পবিত্র কালিমা উৎকীর্ণ করেন। খ্রিষ্টীয় ৯ম শতাব্দীতে ব্রোঞ্জ
নির্মিত একটি আইরিশ ক্রসের মধ্যস্থলে কুফি লিখন পদ্ধতিতে “বিসমিল্লাহ” উৎকীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও ইতালি,
স্পেন এবং ফ্রান্সের গির্জা অথবা সমাধীর অলংকরণে সাবলীলভাবে আরবি লিপিকলা মোটিফ হিসাবে প্রয়োগ
করা হয়েছে। স্কট উল্লেখ করেন , খ্রিষ্টানদের অজান্তেই কুফি লিপি শৈলির মাধ্যমে কুরআনের বানী গির্জার প্রাচীরে
উৎকীর্ণ করা হয়েছে। যেমন সেন্ট পিটারের প্রসিদ্ধ গির্জার সুউচ্চ ফটকে আরবি লিপির কালিমা শোভিত বাণী
খোদাই করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা ধর্মীয় কোন চেতনার প্রতিফলন নয়; এটা আরবি লিপির শৈল্পিক অভিব্যক্তি
যা শিল্পীকে নিজের অজান্তেই আন্দোলিত করেছে। চতুর্দশ শতাব্দীর রেনেসাঁ চিত্রকর জিওট্টো ও ভেনিজিওনোর
চিত্রকর্মে আরবী নকশা পাওয়া যায়। এমনকি বিংশ শতাব্দীর পাশ্চাত্য শিল্পী পল ক্লি, যিনি বহুদিন তিউনিসে
অবস্থান করেন, তার ‘হারবার ইন ব্লম’ শীর্ষক চিত্রে ‘মুহাম্মদ’ শব্দটি কুফি রীতিতে অঙ্কিত করেন। সুতরাং এ কথা
নির্দ্বিধায় বলা যায়, আরবি লিপিকলার সাংস্কৃতিক বিকাশ অন্যান্য লিপিকলার চাইতে উৎকৃষ্ট বা নয়নাভিরাম না হলে
বিভিন্ন অমুসলিম দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের স্থাপত্যে অলংকরণ প্রক্রিয়ায় আরবি লিপিকলা এতো মর্যাদাপূর্ণ স্থান
পেত না।
আরবি লিপিকলার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশী যে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হলো : পবিত্র কুরআন , ধর্মীয় চেতনা ও
বিধিনিষেধ যা মুসলিম শিল্পীদের এককভাবে লিপিকলার চর্চায় আত্মনিয়োগে সাহায্য করে।
Monjur Hossain
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.